দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিতে গতি নেই। সরকারিভাবে ১১ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম শুরু হলেও দেশে এসেছে মাত্র এক লাখ ৯৪ হাজার টন। আর বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১৩ লাখ টনেরও বেশি চাল আমদানির অনুমতি দিলেও দেশে এসেছে মাত্র ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টন চাল আমদানির টার্গেট থাকলেও দেশে চাল প্রবেশ করেছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টন। মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতে চালের দাম বেশি হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমদানি করা চাল দিয়ে স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সফলতার মুখ দেখছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বোরো ও আমনের ফলন কম হওয়ায় সরকার প্রধান গত আগস্টে প্রয়োজনীয় চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ওই সুযোগ গ্রহণ করেনি। সময়মতো চাল আমদানি না-করায় আজকের দেশে চাল মজুদের নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ গত বোরো ও আমন মৌসুমে চালের ফলন কম হয়েছে তা সরকারের সবাই কমবেশি জানতো। সেজন্যই গত বছরের আগস্টে প্রয়োজনীয় চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নানা গড়িমসির কারণে কাক্সিক্ষত পরিমাণ চাল আমদানি করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। ফলে চালের সরকারি মজুত কমার পাশাপাশি চালের দাম বাড়তে থাকে। সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি গুদামে মজুত রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ খাদ্যশস্য। তার মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৭৭ হাজার চাল এবং প্রায় ৭৯ হাজার ৪৪ টন গম। অথচ গত বছর একই সময়ে সরকারি মজুত ছিল ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৬ টন খাদ্যশস্য। তার মধ্যে ছিল ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৫ টন চাল এবং ৩ লাখ ১৭ হাজার ১১ টন গম। অর্থাৎ এখন গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ লাখ টন মজুত কম। এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির গতি বাড়াতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরো ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। যাতে করে কম খরচে দ্রুত চাল আমদানি করে স্থানীয় বাজারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তার আগে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সুযোগ দেয়ার সময় আমদানি শুল্ক ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। বেসরকারিভাবে ৩২০ জন আমদানিকারককে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এলসি খোলার সময়সীমা দুবার বাড়ানোর পরও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেকে এলসি খোলেননি। অনেকে এলসি খুললেও চাল আমদানি করেনি। মূলত চাল আমদানির এলসি খোলা ও আমদানির পরিমাণ হতাশাজনক। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে যারা এলসি খোলেনি তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চাল আমদানির সিদ্ধান্তের শুরুতে কিছুটা দাম কমলেও পুনরায় ধান ও চালের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে ধীরগতিতে চাল আসায় পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তোলা যাচ্ছে না। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ওএমএসও বিতরণ করা যাচ্ছে না। শুধু মহানগরী ও জেলা শহরগুলোয় সীমিত পরিমাণে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আনার বিপরীতে এলসি খোলা হয়েছে ৮ লাখ ২৬ হাজার টন, যা মোট বরাদ্দের অর্ধেকের কিছু বেশি। আর চাল দেশে এসেছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন। আর সরকারিভাবে টেন্ডার এবং জিটুজি পদ্ধতিতে ১১ লাখ টনের বেশি চাল আনার প্রক্রিয়া চলছে। তার মধ্যে দেশে চাল এসেছে এক লাখ ৯৪ হাজার টন। ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪টি টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। অনেকে চাল দিতে পারছে না। যেখানে বিশ্ববাজারে চালের দাম টনপ্রতি ৪২০-৪৩০ ডলার, সেখানে টেন্ডারে দর নির্ধারণ হয়েছে ৩৯৭ ডলার। ফলে প্রতি টনে লোকসান গুনতে হবে ৩০-৩৫ ডলার পর্যন্ত। ওই কারণেই ৪টি টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকে চাল আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের সীমান্তের ওপারে নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। ফলে চাল আমদানিতে গতি পাচ্ছে না। এদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান, চাল আমদানির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং চাল পরিবহণে জাহাজ না-পাওয়ায় দেরি হচ্ছে। আমদানির মাধ্যমে মজুত বাড়ানো হবে। আর বেসরকারিভাবে আমদানি করা চালের পরিমাণ আশানুরূপ না হওয়ায় বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
Leave a Reply